Tuesday, March 23, 2010

নন্দলাল

নন্দলাল তো একদা একটা করিল ভীষণ পণ -
স্বদেশের তরে, যা করেই হোক, রাখিবেই সে জীবন।
সকলে বলিল, 'আ-হা-হা কর কি, কর কি, নন্দলাল?'
নন্দ বলিল, 'বসিয়া বসিয়া রহিব কি চিরকাল?
আমি না করিলে কে করিবে আর উদ্ধার এই দেশ?'
তখন সকলে বলিল- 'বাহবা বাহবা বাহবা বেশ।'

নন্দর ভাই কলেরায় মরে, দেখিবে তারে কেবা!
সকলে বলিল, 'যাও না নন্দ, করো না ভায়ের সেবা'
নন্দ বলিল, ভায়ের জন্য জীবনটা যদি দিই-
না হয় দিলাম, -কিন্তু অভাগা দেশের হইবে কি?
বাঁচাটা আমার অতি দরকার, ভেবে দেখি চারিদিক'
তখন সকলে বলিল- 'হাঁ হাঁ হাঁ, তা বটে, তা বটে, ঠিক।'
নন্দ একদা হঠাৎ একটা কাগজ করিল বাহির,
গালি দিয়া সবে গদ্যে, পদ্যে বিদ্যা করিল জাহির;
পড়িল ধন্য দেশের জন্য নন্দ খাটিয়া খুন;
লেখে যত তার দ্বিগুণ ঘুমায়, খায় তার দশ গুণ;
খাইতে ধরিল লুচি ও ছোকা ও সন্দেশ থাল থাল,
তখন সকলে বলিল- 'বাহবা বাহবা, বাহবা নন্দলাল।'

নন্দ একদা কাগজেতে এক সাহেবকে দেয় গালি;
সাহেব আসিয়া গলাটি তাহার টিপিয়া ধরিল খালি;
নন্দ বলিল, 'আ-হা-হা! কর কি, কর কি! ছাড় না ছাই,
কি হবে দেশের, গলাটিপুনিতে আমি যদি মারা যাই?
বলো কি' বিঘৎ নাকে দিব খত যা বলো করিব তাহা।'
তখন সকলে বলিল – 'বাহবা বাহবা বাহবা বাহা!'

নন্দ বাড়ির হ'ত না বাহির, কোথা কি ঘটে কি জানি;
চড়িত না গাড়ি, কি জানি কখন উল্টায় গাড়িখানি,
নৌকা ফি-সন ডুবিছে ভীষণ, রেলে 'কলিসন' হয়;
হাঁটতে সর্প, কুকুর আর গাড়ি-চাপা পড়া ভয়,
তাই শুয়ে শুয়ে, কষ্টে বাঁচিয়ে রহিল নন্দলাল
সকলে বলিল- 'ভ্যালা রে নন্দ, বেঁচে থাক্ চিরকাল।'
তখন সকলে বলিল- 'বাহবা বাহবা বাহবা বেশ।' .................... দ্বিজেন্দ্রলাল রায়

ছোটবেলার ছড়া

আম পাতা জোড়া-জোড়া..
মারবো চাবুক চড়বো ঘোড়া..
ওরে বুবু তুই সরে দাঁড়া..
আসছে আমার পাগলা ঘোড়া..
পাগলা ঘোড়া ক্ষেপেছে..
চাবুক ছুঁড়ে মেরেছে..

Sunday, March 21, 2010

কাজের ছেলে


দাদখানি চাল, মুসুরির ডাল, চিনি-পাতা দৈ,
দুটা পাকা বেল, সরিষার তেল, ডিমভরা কৈ।
পথে হেঁটে চলি, মনে মনে বলি, পাছে হয় ভুল;
ভুল যদি হয়, মা তবে নিশ্চয়,
ছিঁড়ে দেবে চুল।
দাদখানি চাল, মুসুরির ডাল, চিনি-পাতা দৈ,
দুটা পাকা বেল, সরিষার তেল, ডিমভরা কৈ।
বাহবা বাহবা ভোলা ভুতো হাবা খেলিছে তো বেশ!
দেখিব খেলাতে, কে হারে কে জেতে, কেনা হলে শেষ।
দাদখানি চাল, মুসুরির ডাল, চিনি-পাতা দৈ,
ডিম-ভরা বেল, দুটা পাকা তেল, সরিষার কৈ।
ওই তো ওখানে ঘুরি ধরে টানে, ঘোষদের ননী;
আমি যদি পাই, তা হলে উড়াই আকাশে এখনি!
দাদখানি তেল, ডিম-ভরা বেল, দুটা পাকা দৈ,
সরিষার চাল, চিনি-পাতা ডাল, মুসুরির কৈ!
এসেছি দোকানে-কিনি এই খানে, যত কিছু পাই;
মা যাহা বলেছে, ঠিক মনে আছে, তাতে ভুল নাই!
দাদখানি বেল, মুসুরির তেল, সরিষার কৈ,
চিনি-পাতা চাল, দুটা পাকা ডাল, ডিম ভরা দৈ।

যোগীন্দ্রনাথ সরকার

Friday, February 26, 2010

ভিস্তি

ভিস্তি এক লুপ্তপ্রায় পেশা।

কালো চামড়ার বালিশের মত 'মশক' ভরে যারা জল দিয়ে যেত তাদের বলা হত ভিস্তি, অনেকে আবার ভিস্তিওয়ালা বলে থাকেন। বিংশ শতকের প্রথম কয়েক দশক পর্য্যন্ত এই ব্যবসার প্রচলন ছিল। বর্ত্তমানে এই পেশা বিলুপ্তপ্রায়। এক কালে যুদ্ধের সময় সৈন্যরা ভিস্তিতে জল রাখত। ব্রিটিশদেরও যুদ্ধ ক্ষেত্রেও দুর্গের মধ্যে খাবার জলের জন্য একমাত্র ভরসা ছিল ভিস্তি। ঢাকায় যে টমটম গাড়ি চলত, তাতেও থাকত জল ভর্ত্তি মশক। এই মশক সাধারণত ছাগলের চামড়া দিয়ে তৈরী হত। মশক তৈরী করার জন্য লাগত বিশেষ দক্ষতা। ভিস্তিওয়ালারা কলকাতায় এক মশক জল বিক্রি করত ১০ থেকে ২০ টাকায়। অনেকে এই জল রান্না ও স্নানের জন্য ব্যবহার করতেন। শোনা যায়, ১৯৪০-৫০ সাল পর্য্যন্ত কলকাতার কিছু পথ, যেখানে ভূগর্ভ গঙ্গাজলের নল ছিল না, সেখানে ভিস্তির জল দিয়ে রাস্তা ধোয়ান হত।


ভিস্তিরা সাহিত্যে বেশ বিখ্যাত।
লাখোবার যায় যদি সে          যাওয়া তার ঠেকায় কিসে?
ভেবে তাই পাই নে দিশে নাই কি কিচ্ছু উপায় তার?''
 কথাটা যেমনি বলা           রোগা এক ভিস্তিওলা 
ঢিপ্ 'রে বাড়িয়ে গলা প্রণাম করল দু'পায় তার
- নেড়া বেলতলায় যায় 'বার? / আবোল তাবোল / সুকুমার রায়

তখন বেগে ছুটিল ঝাকে ঝাক
মশক কাখে একুশ লাখ ভিস্তি।
পুকুরে বিলে রহিল শুধু পাক,
নদীর জলে নাহিকো চলে কিস্তি।
- জুতা আবিষ্কার/ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
"রোজ মশক ভরে দুবেলা পানি দিয়ে যেত আমাদের বাড়িতে। ... কালো মোষের পেটের মতো ফোলা ফোলা মশক পিঠে বয়ে আনত ভিস্তি। তারপর মশকের মুখ খুলে পানি ঢেলে দিত মাটি কিংবা পেতলের কলসের ভেতর। মনে আছে ওর থ্যাবড়া নাক, মাথায় কিস্তি টুপি, মিশমিশে কালো চাপদাড়ি, আর কোমরে জড়ানো পানিভেজা গামছার কথা। ... একদিন পানির কল এলো আমাদের মাহুতটুলীর বাড়িতে। আর সেই সঙ্গে বিদায় নিল ভিস্তি।'' - বাংলাদেশী কবি শামসুর রহমান বাদশা হুমায়ুন নাকি যুদ্ধের ময়দান থেকে একবার পালিয়ে যাচ্ছিলেন তখন এক ভিস্তি তাকে জল খাইয়ে এবং তাকে পালাতে সাহায্য করেছিল। বাদশা হুমায়ুন তার ইচ্ছার কথা শুনতে চান। ভিস্তি সিংহাসনে বসতে চান। বাদশা হুমায়ুন তাকে প্রতিশ্রুতি দেন। পরে প্রতিশ্রুতি মোতাবেক এক ভিস্তিকে একদিনের জন্য রাজ সিংহাসনে বসান।
এছাড়াও আছে রুডইয়ার্ড কিপলিং সাহেব লিখিত 'গঙ্গা দীন'
এখন কলকাতা শহরে একটাই ভিস্তি পড়ে আছে, সেটা বেশ শক্ত পোক্ত, আশা করা যায় বেশ কিছুদিন থাকবে। এটা আছে City Centre, Salt Lake-এর সামনে।



জানিনা কোন পুরোনো বাড়িতে চামড়ার ভিস্তির ধ্বংসাবশেষ পড়ে আছে কি না।

আজকাল যারা বোতলে করে mineral water সরবরাহ করে তাদের ভিস্তিওয়ালা বলা যাবে?